সেক্সচুয়ালিটি এবং বিজ্ঞান

উভকামী , সমকামী এবং বিষমকামী এই শব্দগুলোর অর্থ বুঝতে হলে আমাদের প্রথমত বুঝতে হবে লিঙ্গ ও যৌনতার মধ্যকার পার্থক্য।  যেহেতু বিজ্ঞানভিত্তিক বইগুলো অধিকাংশই ইংরেজিতে বর্ণিত এবং আমরা সবাই সেই ইংরেজি পরিভাষাগুলোর সাথেই বেশি পরিচিত , আমি আমার লেখায় সেই বহুলপরিচিত শব্দগুলোই ব্যবহার করবো সবার বুঝার সুবিধার্থে।

লেখক স্যাম কিলারম্যান তাঁর বই ‘A guide to gender’ এ খুব সহজভাবে এই লিঙ্গ ও যৌনতার পার্থক্য তুলে ধরেছে। নিম্নলিখিত ৪টি ক্ষেত্র একজন মানুষের লিঙ্গ, যৌনতা, পোশাক পরিচ্ছদ বর্ণনা করতে পারে।

১।  জেন্ডার আইডেন্টিটি : মানসিকভাবে একজন ব্যক্তি নিজেকে কোন লিঙ্গ হিসেবে পরিচয় দেয়।

২।  জেন্ডার এক্সপ্রেশন: একজন ব্যক্তি কিভাবে নিজেকে সাজাতে বা সমাজের সামনে উপস্থাপন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, তাই হলো জেন্ডার এক্সপ্রেশন।

৩। বায়োলজিক্যাল সেক্স: একজন ব্যক্তি শারীরিক ভাবে কোন লিঙ্গ নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন।

৪।  সেক্সয়াল ওরিয়েন্টেশন : একে বাংলায় আমরা বলে থাকি অভিযোজ।  এর অর্থ হলো একজন ব্যক্তি কার প্রতি আকৃষ্ট।

লক্ষ্য করার বিষয় হলো , এই চারটি ধাপের কোনোটাই বাইনারি বা দুইভাগ বিশিষ্ট নয়।  এই ধাপগুলো বর্ণনা করা হয় ‘স্পেকট্রাম’ সবটার মাধ্যমে।  যার অর্থ হলো আপনি এই বিষয় গুলো শুধুমাত্র সাদা বা কালোর অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন না।  কারণ মাঝখানে একটা ধূসর অংশ লক্ষণীয়।

বায়োলজিক্যাল সেক্স এমন একটা বিষয় যা প্রকৃতিগতভাবেই নির্ধারিত।  তাঁর মধ্যে রয়েছে নারী, পুরুষ এবং উভলিঙ্গ।  উভলিঙ্গ শব্দটার ইংরেজি পরিভাষা হলো ইন্টারসেক্স।  ইন্টারসেক্স যারা আছেন , তাদের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীন এবং বাহ্যিক যৌনাঙ্গের অসঙ্গতি লক্ষণীয়।  অর্থাৎ উভয় ধরণের যৌনাঙ্গের উপস্থিতি পাওয়া যায় একজন মানুষের গড়নে।  এখন আপনি যদি একজন ইন্টারসেক্স মানুষের জেন্ডার আইডেন্টিটি নিয়ে একটু চিন্তা করেন, তাহলে সহজেই একজন মানুষ কিভাবে মানসিক ভাবে নিজেকে কোনো নির্দিষ্ট লিঙ্গের সদস্য হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে পারে , সেই ব্যাপারটা অনুধাবন করতে পারবেন।

এখন আসা যাক সেক্সচুয়াল ওরিয়েন্টেশন বা যৌন অভিযোজন এই বিষয়টাত।  একজন মানুষ মানসিক ও শারীরিকভাবে অপর কোন পক্ষের প্রতি আকৃষ্ট, তাই বুঝা যায় এর মাধ্যমে।  আমাদের সমাজে অধিকাংশ মানুষই বিষমকামী অর্থাৎ হেটেরোসেক্সচুয়াল। যার অর্থ হলো ের বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট।  যারা সমকামী তারা একই লিঙ্গের প্রতি শারীরিক ও মানসিকভাবে আকৃষ্ট।  আরো এক পক্ষ রয়েছেন, যারা উভয় লিঙ্গের প্রতিই আকৃষ্ট, যাদেরকে আমরা বলে থাকি বিসেক্সচুয়াল।  অধিকাংশ মানুষই ছোটবেলায় তাদরে অভিযোজন উদ্ঘাটন করে থাকেন।  কিছু মানুষ ‘ক্লোসেটেড’ থাকেন, আবার কিছু মানুষ ‘পরিবর্তিত’ ও হতে পারেন।  ‘ক্লোসেটেড’ শব্দটি বেবহার করা হয় তখন , যখন কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি অনেক ছোটবেলাতেই তাদের অভিযোজন আবিষ্কার করে ফেলেন, কিন্তু সমাজের কটুদৃষ্টির ভয়ে ব্যাপারটা ধামাচাপা দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেন। ডাক্তার লিসা ডায়মন্ড তাঁর রিসার্চে ‘পরিবর্তিত’ বিষয়টি বেক্ষা করেছেন।  যেখানে তিনি ১০০ নারীর উপরের ২০ বছরের জরিপের ফল প্রকাশ করেছেন।  তিনি বলেছেন, একদিকে যেমন অনেক সমকামী নারী পরবর্তীতে পুরুষ জীবনসঙ্গী বেছে নিয়েছেন , ওপর পক্ষে অনেক নারী, অনেক বছরের গতানুগতিক বিবাহবন্ধনে থেকে বেরিয়ে সমকামী হয়েছেন।  এই বিষয়টাকে উপস্থাপন করা হয় ‘জেন্ডার ফ্লুইড’ এই সব্যতার মাধ্যমে।  যেকোনো মানুষ জীবনের যেকোনো ধাপে ওরিয়েন্টেশন পরিবর্তন করতে পারেন।

সুতরাং, আমি আশা করি আপনাদের কাছে বিষমকামী , সমকামী এবং উভকামী এই শব্দগুলোর স্বাভাবিকতা তুলে ধরতে পেরেছি।