.
আমার মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করাতে ইন্টারভিউ দিতে স্কুলে গিয়েছিলাম। সব শুনে প্রিন্সিপাল বলল, বাড়িতে বাচ্চার দেখাশোনা কে করে? তারা শিশুটির পদবি সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করেছিল। তারা বলেন, দ্বিতীয়বার বিয়ে করলে আপনার স্বামী সন্তান দত্তক নেবেন। তারপর আপনাকে আপনার উপাধি পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু যখন শুনলাম আমার চাকরি আছে, তখন পরের প্রশ্ন ছিল, আপনি কি এই স্কুলে পড়াতে পারবেন? আপনি কি একা আপনার সন্তানের যত্ন নিতে পারবেন? আপনি আপনার সময় কিভাবে দেবেন? কত দিবেন? আমি সেদিন বলতে পারিনি, আরে, মেয়েকে বেশি সময় দিতে চাইলে চাকরি ছাড়তে হবে। তাহলে এত টাকা খরচ করে কিভাবে আমার মেয়েকে তোমার স্কুলে পাঠাব?
.
আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে তারা সেদিন ইতস্তত করেছিল কারণ তারা একা মা ছিল, তারা তাদের মেয়েকে স্কুলে পাঠাতে এত টাকা খরচ করতে পারে কিনা। তবে অন্যান্য অভিভাবকদের মতো একক মাদেরও আয়ের শংসাপত্র দিতে হবে। তার পরেও এত প্রশ্ন!
.
সিঙ্গেল মাদার মানে কর্মজীবী নারী, এটা মোটামুটি ধরে নেওয়া যায়। সেক্ষেত্রে সন্তানদের প্রতি তারা কম আকৃষ্ট হবে কি না তা নিয়ে অনেকেই চিন্তিত। অনেকে এমন উদ্ভট ধারণাও দেখেছেন যে একজন একা মা কাজের জন্য বাইরে যান কারণ তিনি তার সন্তানকে সময় দিতে চান না। তার চারপাশের লোকেরা তার সন্তানের প্রতি একক মায়ের ভালবাসা পরীক্ষা করার জন্য খুব আগ্রহী। অফিসে যাওয়ার জন্য বাড়ির গেট থেকে ছুটতে ছুটতে কেউ একজন বলে উঠল, তোমার মেয়েকে একটু আদর দাও। অথবা প্রশ্ন উড়ে যাবে, “আপনি কি আপনার মেয়ের সাথে দেখা করেছেন?” যেন সে সময় তাকে ভালোবেসে ফেলে চলে যাওয়া মানে আমি আমার সন্তানকে ভালোবাসতাম!
.
আমি এমনও দেখেছি যে লোকেরা একক মাদের একটু বেশি সাহসী বলে মনে করে। তারা মনে করেন, তিনি একাই যখন সন্তান লালন-পালনের দায়িত্ব নিয়েছেন, তখন মেয়েটি সব করতে পারে। সেজন্য রাত সাড়ে দশটায় মেয়েটিকে খালি লোকাল ট্রেনে একা রেখে যেতে দ্বিধা করে না তারা। তাদের কেউ কেউ হয়তো একদিন মেয়েটিকে বুঝিয়ে দিয়েছিল যে মেয়েরা রাতে নিরাপদ নয়। সেই সময়, অনেকেই আর ভাবেন না যে তিনি অন্য পাঁচটি মেয়ের মতো দুর্ঘটনা ঘটাতে পারেন। একজন অবিবাহিত মা স্বভাবতই একজন সুপারওম্যানের মতো। ডিভোর্স হয়ে যাওয়ার পর অনেকেই ফোন করে বলে, “চিন্তা করো না, আমরা আছি তোমার জন্য।” শেষ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, সন্তানের অসুস্থতায় মন খারাপ করে একাই সবকিছু সামলাচ্ছেন একক মা।
.
বিধবাদের ক্ষেত্রে ‘সিঙ্গেল মাদার‘ শব্দটা শোনা মাত্রই গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়। ‘তুমি কি সত্যিই অবিবাহিত? নাকি বাইরে আপনার কোন বিশেষ বন্ধু বা আত্মীয় আছে?’ তাকে অন্য কারো সাথে আড্ডা দিতে দেখা অন্য স্ক্যান্ডাল। এমনকি কফি টেবিলে একজন পুরুষের সাথে তার মুখোমুখি বসে থাকার দৃশ্যটি তার চারপাশের লোকদের কল্পনায় পৌঁছে যায়, এমনকি শোবার ঘরেও। কিছু রসালো ফিসফিস যে একক মায়ের কানে পৌঁছায় না তা নয়। সব শুনেও মাথা ঠাণ্ডা রাখাই তার সংগ্রাম।
.
এটা তার সমস্ত হৃদয়ে সত্য যে একা পরিবার এবং সন্তানদের পরিচালনা করা কঠিন। কিন্তু এটা সম্ভব নয় এমনটা ভাবা বোকামি। একজন মায়ের জন্য তার সন্তানকে ভালো করে গড়ে তোলার চেয়ে বড় কোনো কাজ হতে পারে না। সামাজিক নিরাপত্তার জন্য একজন স্বামী বা পিতা আবশ্যক। কিন্তু তার মানে এই নয় যে সারাজীবন নিজের আত্মসম্মান বা অন্যায়ের সাথে আপস করে নিজের হৃদয়কে ছোট করার দায়িত্ব আপনাকেই বহন করতে হবে। একজন শিশুকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য একজন নারী ও পুরুষ উভয়েরই একে অপরকে সম্মান করা এবং তাদের উভয়ের প্রতি বিশ্বস্ত ও দায়িত্বশীল হওয়া অপরিহার্য। এখানে মতপার্থক্য যদি ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতির রূপ নেয়, তাহলে সন্তানের ভালোর জন্য আলাদা হয়ে যাওয়াই ভালো।
.
আমাদের সমাজের মানুষ আসলে চিন্তার শক্তির গভীরে প্রবেশ করে না বা করতে পারে না। অতএব, তারা সহজেই মানুষের সম্পর্ক এবং অবস্থান সম্পর্কে কথা বলে। যতক্ষণ না তারা নিজেরা বা তাদের নিজের পরিবারের কেউ সেই জায়গায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়, ততক্ষণ তারা অন্যদের যে কোনও পরিস্থিতি সম্পর্কে সহজেই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে। তাই, অবিবাহিত মায়েদের অন্যের কথায় মনোযোগ না দিয়ে নিজের জন্য যা সবচেয়ে ভালো তা করা উচিত।