বাংলাদেশের পরিবারগুলোতে শিশু জন্ম নেয়া এক দারুণ ব্যপার বটে। কারণ সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে সন্তানটি ছেলে নাকি মেয়ে। হ্যা, জানার আগ্রহটা দোষনীয় নয়। তবে গর্ভবতী মহিলার শাশুড়ির একটা আবেদন থাকে ছেলের বৌ এর প্রতি যেন বাচ্চাটা ছেলেই হয়।
বাচ্চাটা ছেলে হলে আনন্দ করে আযান দেয়া হয়,পুরো মহল্লায় চলে মিষ্টি বিতরণ। কিন্তু মেয়ে বাচ্চা হলে মুখ হয়ে ওঠে আষাঢ়ের কালো মেঘ। বাড়ির মুরুব্বিদের মুখে শোনা যায় কষ্টের অনুভূতি জড়িত কথা, ” জন্ম মৃত্য আল্লাহ্ পাকের হাতে, তার ইচ্ছা তো মেনে নিতেই হবে”।
অনেক পরিবারে তো স্বামী স্ত্রীর বিচ্ছেদ হয় শুধু মাত্র মেয়ে শিশু জন্ম দেয়ার কারণে। আজকাল শহরে হয়ত এটা কমেছে কিন্তু গ্রামে কিন্তু কমার বদলে বেড়েছে। সন্তান জন্মানোর পর সমাজ তাদের আচরণ নির্ধারণ করে দিতে আসে। পুরুষকে হতে হবে বীর আর মেয়েদের হতে হবে লজ্জাবতী। পুরুষ যা ইচ্চা করে বেড়াবে আর মেয়েকে হতে হবে অবরোধবাসীনি। পুরুষালী আর মেয়েলি আচরণ নামে সমাজে দুটি আচারণভেদ তৈরী হয়েছে। কেউ এই আচরণ বিধির গন্ডি পেরুতে পারবে না। এটাই সমাজের তথাকথিত নিয়ম।
পুরুষ নিজের ইচ্ছামত পোশাক পরতে পারবে কিন্তু নারীকে হতে হবে বস্তাবন্দি। বস্তাবন্দি না হলে পুরুষ ধর্ষণ করতে পারবে। ধর্ষণের পর নির্লজ্জের মতো নারীকে তেতুল উপাধি দেবে, দোষ দেবে নারীর পোষাককে। কখনও নিজেদের লুচ্চা চরিত্রের কথা ভুলেও মুখে আনবে না। সমাজে স্বামী হচ্ছে প্রভু আর স্ত্রী হচ্ছে সেবিকা। স্বামী স্ত্রীকে মারতে পারবে, নির্যাতন করতে পারবে কিন্তু স্ত্রী ভুলেও বদমাইশ স্বামীকে একটু উত্তম মাধ্যম দিতে পারবে না।
ভাল পাত্রের সাথে মেয়েকে বিবাহ দিতে হলে যৌতুক দিতে হবে পাঁচ-সাত লক্ষ টাকা , দামি গাড়ি দিতে হবে আবার বাড়িও সাজিয়ে দিতে হবে। আজকে মেয়েরা পড়ালেখার সুযোগ পেলেও এই অধিকার আদায়ে হাজার রোকেয়াকে একদিন পথে নামতে হয়েছিল। ধর্মও নারীর প্রতি বৈষম্য থেকে মুক্ত ছিল না। কারণ পুরুষের হাতেই তো ধর্মের সৃষ্টি। তাই প্রায় ধর্মই নারী বিদ্বেষী।
ধর্ম মতে নারী হচ্ছে অপবিত্র, জাহান্নামী, শয়তানের রজ্জু, ডাইনি, পুরুষের অর্ধেক, নারী হচ্ছে ফেতনা, জ্ঞানহীন ইত্যাদি। নারী কখনই ধর্মগুরু হয়ে উঠতে পারে নি। নারীদের শাষণ ক্ষমতায় দেখতে ধর্মগুলো নারাজ। হিন্দু সমাজে পতিব্রতার নামে হাজার হাজার নারীকে দাহ করে হত্যা করা হয়ছে। কিন্তু কই কখনও কোন পুরুষ তো তার স্ত্রীর মৃত্যু দেহের সাথে দাহ হল না।
স্ত্রীকে তালাক দেয়ার অপরাধে হিল্লা প্রথা চালু হল। কিন্তু তাতে ঐ অপরাধী পুরুষের কি শাস্তি হল? জাহান্নামে নারী দিয়ে পূর্ণ আর জান্নাতের এক পুরুষের সাথে সত্তর হুরের ব্যবস্থা। জাহান্নামে এত নারী থাকার কারণ হল স্বামী যদি যৌন সম্ভোগ করার জন্য আহব্বান করে কিন্তু তাতে যদি স্ত্রী সাড়া না দেয় তাহলে সত্তর হাজার ফেরেশতা তাদের অভিশাপ দেয়।
নারী হচ্ছে পুরুষের শষ্যক্ষেত্র মাত্র। তাই পুরুষের ইচ্ছাই সব, এতে নারীর ভাল লাগা, খারাপ লাগার কোন মূল্য নাই। নারী ধর্ম কর্ম করে জান্নাতে গিয়েও সুখ পাবে না। কারণ দুনিয়াতে যে স্বামী তাকে সারা জীবন নির্যাতন করেছে জান্নাতেও সেই স্বামীর সাথে বাহাত্তরটি হুর সতীনের সাথে থাকতে হবে। আসলে এসব সমাজ, ধর্ম, ঈশ্বর, আল্লাহ্, ভগবান সবই পুরুষের স্বার্থে তৈরী। সমাজের চোখে যারাই সেই কল্পিত পুরুষ হতে পারে নি তারাই বৈষম্যের শিকার হয়েছে। আর তথাকথিত সেই পুরুষ দুনিয়াতে বহুবিবাহ, দাসি সেক্স আর পরকালে বাহাত্তর হুরের স্বপ্নেই মত্ত হয়ে আছে।